বলা হয়ে থাকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৯৭℅ বেসরকারি! এ প্রতিষ্ঠানগুলোতেই গ্রামের প্রায় সকল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করতে হয়।কিন্তু এ শিক্ষা ব্যবস্থা কেন যেন পরিকল্পনাহীন যেনতেনভাবে চলছে বলে মনে হয়!বই পেতে পেতে মার্চ চলে গেল,এপ্রিলে এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে সীমিতাকারে ক্লাস চলছে,সামনে ঈদুল আযহা,এর পর অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা!
পাঠ্যক্রমের কত শতাংশ শেষ হয়েছে জানা থাকবেনা কিন্তু আবশ্যিকভাবে পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের! যে প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হবে তা আবার অন্যের প্রস্তুত করা!শিক্ষার্থীদের অবস্থা ভাবলেই গা শিউরে উঠবে যে কোন সচেতন মানুষের! কিন্তু তা দেখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই!সহস্র সীমাবদ্ধতায় তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া মানেই হচ্ছে নিজেদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া! শ্রেনিতে এখন ৫৫ জন শিক্ষার্থীর সীমারেখা দেওয়া হয়েছে!কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন!বাধ্য হয়ে অনেক শ্রেণিতে শতপ্রায় শিক্ষার্থী নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে হয়!শিক্ষার্থীদের কোনমতে বসার ন্যুনতম সুযোগ থাকলেও নেই পর্যাপ্ত অন্য সুযোগ সুবিধা। মূল শাখার বাইরে অতিরিক্ত দুই শাখা থাকার সীমাবদ্ধতা থাকলেও বাস্তবতায় তা মানা সম্ভব হচ্ছেনা কেননা তাদের ভর্তি না করালে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা।
পাশাপাশি অন্য স্কুল গড়ে না উঠায় তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে নিশ্চিতভাবেই! আবার সরকার মোট শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন অনুপাতে নেয় দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি!।বাস্তবতাও তাই! অনেক যায়গায় দেখা যায় নিয়মনীতি না মেনে ক্ষমতার ব্যবহারে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে আর এম,পি,ও হয়ে যাচ্ছে।কাম্য শিক্ষার্থী নেই এ রকম অনেক অনেক প্রতিষ্ঠান আছে।সময় এসেছে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নিয়ে ভাবার। আইন ও বিধির যথাযথ প্রয়োগে উদাসীনতা দৃশ্যমান!যে ভাবছে, বিষয়গুলো নিয়ে যাঁরা চিন্তা করছেন তাদের ক্ষমতা নেই এ ব্যাপারে অবদান রাখার!আর যাঁরা অবদান রাখতে পারবেন তাঁরা ব্যাস্ত অন্য কাজে! ফলে ব্যাপক এ সমস্যার আশু সমাধান হবেনা তা প্রায় অনেকেই ধরে নিয়েছেন!
লক্ষ লক্ষ এ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রজ্ঞাবানরা এগিয়ে না আসলে যতই এ দেশকে সিঙ্গাপুর আর কানাডা বানানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তা যে নিচক কথার বুলি তা এখন আগের চেয়ে বেশি মানুষ বুঝতে পারে!রাজনীতি এখন মানুষ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন,জনগনের নামে যা আমাদের খাওয়া হচ্ছে তা বাধ্য হয়েই গিলছে! বাস্তবতা অনেক ভিন্ন! সকলেই জনগন চাচ্ছে,জননিরাপত্তায় তা করা হচ্ছে,জনগনের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতিতে এ কাজ,ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে!বেশির ভাগ মানুষ যারা ওদের বলা জনগন নয় তা বুঝতে পারছে!
এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ অনুত্তীর্ণ, শতভাগ অনুপস্থিত এ রকম খবর এখন পত্রিকায় খবর হয়! একটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরী। বেশিরভাগ মানুষ যেহেতু গ্রামেই বাস করেন তাই অন্তত গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা মানসম্মত করা, তা নিয়ে উচ্চ মহলে ভাবাটা সময়ের বাস্তবতা।
এ বছর আবার এস,এস,সি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নকলে সহযোগিতার জন্য অনেক শিক্ষকও বহিষ্কার হচ্ছেন! ব্যাপারটা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এখানে অনেক কিছুই জড়িত! প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অনেক শিক্ষক জড়িয়ে যাচ্ছেন! সরকার নির্ধারীত শ্রেণি কার্যক্রমের ৭০ ভাগও যদি হয় শিক্ষার্থীরা বেঁচে যেত! এস,এস,সি পরীক্ষা পরিচালনায় বোর্ডের বিধি মোতাবেক ভেন্যু কেন্দ্র থাকলেই কেবল ভেন্যু প্রতিষ্ঠান প্রধান সহকারী কেন্দ্র সচিব হবেন, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়,যতটি কেন্দ্র ততটি কেন্দ্রেই অন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান যাঁরা ভেন্যু কেন্দ্রের প্রধান নন তাঁদের সহকারী কেন্দ্র সচিব করতে হচ্ছে ফলে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠনের পাশাপাশি সে প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পরীক্ষা চলাকালীন সীমিত পাঠদান চালাতে হচ্ছে,আবার সুষ্ঠু পরীক্ষা পরিচালনার জন্য বা অন্য সীমাবদ্ধতায় কেন্দ্র স্কুলের শিক্ষক কেন্দ্রে দায়ীত্ব পালন করতে না পারায় কেন্দ্র স্কুলের সকল শিক্ষক কক্ষ প্রত্যবেক্ষকের দায়ীত্ব পালন করছেননা ফলে একদিকে কেন্দ্র স্কুলের শিক্ষক পরীক্ষা চলাকালীন কর্মহীন থাকছেন! পরীক্ষা চালনার জন্য অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যবেক্ষক আনতে গিয়ে সেখানেও শ্রেণিকার্যক্রম চালানো সীমিত হয়ে পড়ছে!এ নিয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের ভাবনাটা জরুরী মনে করছেন অনেক সচেতন মানুষ।
শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত না হওয়ার জন্য ভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র নির্মান সরকারের ভাবনার কথা পত্রিকায় দেখা যায় তা অবশ্যই সময়ের দাবী! তবে তা বাস্তবায়নের আগে যতটুকু সম্ভব পরীক্ষা কেন্দ্র নয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে কমলোকবল এনে সে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিকার্যক্রম পরীক্ষা চলাকালীন স্বাভাবিক রাখা যায় কিনা তা ভাবনায় নেওয়া জরুরী, পাশাপাশি পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর পাঠদান ঘাটতি পোষাতে পরবর্তী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর অন্তত ২ ঘন্টা পূর্ব হতে ক্লাস নেওয়া বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা ভাবা খুবই জরুরী।
বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল রাস্ট্র হিসেবে দেখতে চাইলে দক্ষ উপযুক্ত কর্মী তৈরীর বিকল্প নেই।বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে যেকোন ভাল পরীকল্পনাও ব্যার্থ হবে বলে অনেকেই মনে করেন।
রাস্ট্র সংস্কারে অনেক কমিশন হলেও শিক্ষাকমিশন অদৃশ্য কারনে হয়নি।স্থায়ী শিক্ষা কমিশন এখন সময়ের দাবী। যে হারে শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানানো হচ্ছে তা দয়া করে আর দীর্ঘায়ীত যাতে না হয় তা নিশ্চিত করুন।বাংলাদেশের বাস্তবতায় শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করুন এবং তা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য দয়া করে আর সম অপচয় করবেননা। শিক্ষা ব্যবস্থাকে অপরাজনীতি থেকে দূরে রাখুন, শিক্ষকদের রাজনীতি শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায় কিনা সিদ্ধান্ত নিন।আজকের সঠিক সিদ্ধান্তই আগামির সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
-লেখক-
রেজাউল করিম
প্রধান শিক্ষক- চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়।