পাহাড়-সাগড়ের অপূর্ব মিতালীর এক অনন্য জনপদ বাঁশখালী। এটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী চট্টগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। পশ্চিমে নীল জলের বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, পূর্বে চা-বাগান, অভয়ারণ্য, ইকোপার্ক সমৃদ্ধ সবুজে সৃজিত হয়েছে নন্দনকানন। প্রকৃতি ৩৯২ বর্গ কিলোমিটারের বাঁশখালীকে সাজিয়েছে যত্ন করে। চা-বাগানে অবারিত সবুজের হাতছানি, প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট স্বচ্চ জলের দীর্ঘ পাহাড়ী হ্রদে অজস্র পাখির বিচরণ, সমুদ্রের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার মিশেল অনুভূতি একই সাথে নিতে পারেন শুধু বাঁশখালীতেই!
কি নেই এখানে? প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অবলোকনে একজন ভ্রমণপিপাসুর হৃদয় যেন মুহুর্তেই সতেজ আর উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। এই উপজেলায় রয়েছে দর্শনার্থীদের ভ্রমণের আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবলোকনের নানা স্পট। প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জায়াগা জুড়ে থরে বিতরে সাজানো বৈলগাও চা-বাগান শত বছরের ঐতিহ্যের অংশ। ক্লোন চায়ের জন্যে এই বাগানে উৎপাদিত চায়ের কদর দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া জুড়ে অবস্থিত এই চা-বাগানের সৌন্দর্য পিয়াসী মাত্রই মুগ্ধ করে।
আরেকটি জনপ্রিয় ও ভ্রমণপিয়াসীদের পছন্দের ভ্রমণ স্পট বাঁশখালী ইকোপার্ক। বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুটিও রয়েছে এই ইকোপার্কেই। যেটির দৈঘ্য ১২২ মিটার (৪০০ ফুট)। প্রায় ৮কিলোমিটার দৈর্ঘের পাহাড়ি হ্রদ মোহনীয় আবেশ ছড়িয়ে দেয় পর্যটকের মনে। পিকনিক সেট, দ্বিতল রেস্ট হাউস, রিফ্রেশমেন্ট কর্ণার, সুউচ্চ অবলোকন টাওয়ার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, ভাসমান প্লাটফর্ম, সাসপেনশন ব্রীজ, মিনি জল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। একই সাথে প্রাকৃতিক সেগুণ বাগান, জুম ক্ষেত আর বঙ্গোপসাগরের ফেনিল জল রাশি দেখে মুগ্ধ হতে পারেন ওভারভিউ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে।
পাশাপাশি বালুময় ঝাউগাছ ঘেরা দেশের বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পরে ২য় বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত “বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত” এটিও রযেছে এই উপজেলায়। যেটি বাহারছড়া, গন্ডামারা, ছনুয়া, সরল, খানখানাবাদ উপকূল মিলিয়ে সর্বমোট ৩৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত নির্জনতা প্রেমীদের জন্য এক পছন্দের ও আদর্শ জায়গা। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ কিংবা কিশোরদের দলবেঁধে বীচ ফুটবলে মেতে উঠার আনন্দ ভ্রমণকারীদের দেয় এক অপার্থিব পূর্ণতা। নির্জন এই সাগর সৈকতে নিরাপত্তার অভাব নেই মোটেও।
এসবের বাইরেও রয়েছে হাজার বছরের পুরনো স্থাপনা ‘বখশি হামিদ মসজিদ’, ঐতিহাসিক মলকা বানুর মসজিদ ও দিঘী, নাপোড়া অর্গানিক ইকো ভিলেজ, লবণ ও শুটকি শিল্প, চিংড়ি মাছের ঘের, বাঁশখালীর বিখ্যাত লিচু বাগান। এতো এতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানা স্পট আর ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের সম্ভাবনাময়ী পর্যটন শিল্প থাকার পরও এই উপজেলাটি এখনো পর্যটন এলাকার আওতাভুক্ত হয়নি। জনপদের মানুষের প্রাণের দাবি সম্ভাবনাময়ী এই উপজেলাটি যেন অতিদ্রুত কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় এনে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দিক।
লেখক: তৌহিদ-উল বারী
শিক্ষার্থী ও কলাম লেখক।