একটি জাতী কিভাবে গড়ে উঠবে তা নির্ভর করে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। এ জন্যে শিক্ষাকে বলা হয় জাতীর মেরুদণ্ড। সুগঠিত মেরুদণ্ডের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা যেমন জরুরি তেমনি জাতীর মেরুদণ্ড মজবুত করতে সুশিক্ষাটাও তেমন জরুরি। আমি সু-শিক্ষা বলতে নৈতিকতার সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বুঝি। যেখানে নৈতিকতার সমন্বয় থাকেনা সেখানে শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়। যে শিখন পদ্ধতিতে বাস্তবতা থাকেনা সেখানে শিক্ষা সাগরে ভাসমান লোহার কাল্পনিকতা মাত্র! যেখানে শিক্ষা আমাদের মানব চরিত্র গঠনের কাজ করতে অক্ষম সেখানে শিক্ষা নিজেই মেরুদণ্ডহীন। যে শিক্ষা তথাকথিত আধুনিকতার নামে নির্বাসিত সে শিক্ষা দৃশ্যত ঢালপালা বিহীন গাছের মতো অবিন্যস্ত। আজকাল শিক্ষা ব্যবস্থায় এতোটা পরিবর্তন হয়েছে যে, যা বলাই বাহুল্য। বর্তমান প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার লেশমাত্র আর নেই। আমাদের কচিকাঁচাদের এমন শিক্ষা দিচ্ছে যে, যা তাদের মেধাবিকাশের অন্তরায় ছাড়া কিছুই নয়।
সভ্য একটি জাতীর জন্য সুপ্রণীত শিক্ষাব্যবস্থার কোনো বিকল্প নাই। আমি প্রায়ই বলে থাকি, দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে মানুষ বাড়েনি। মানুষ আর জনসংখ্যা আমার কাছে আলাদা ভাবনা। যেমনটি নাগরিক আর সু-নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। সবার সব লেখা পাঠ্য নয়, অ-পাঠ্যও কিছু থেকে যায়। অ-পাঠ্যকে পুস্তকে কালো অক্ষরে মোড়কীকরণ করা হলেও মননে পরিবর্তন আনা যায় না। এখানে ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ এর কথা মনে পড়ে যায়। তিনি বলেছেন, 'আমি বটতলার বাজে উপন্যাস পড়িনি।' বটতলার বাজে উপন্যাস বলতে তিনি বুঝিয়ে ছিলেন, যে উপন্যাস কিংবা সাহিত্য শিক্ষার চেয়ে কুশিক্ষার আবেদন সৃষ্টি করে তাই হলো বটতলার বাজে উপন্যাস। আজকাল দেশে শিক্ষার হার যেভাবে বাড়ছে সেভাবে ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়েনি। কারণ বটতলার বাজে উপন্যাসের মতো অপাঠ্যকে পাঠ্যতে স্থান দিয়েছি। যে হারে পরিক্ষায় 'জিপিএ ফাইভ' বেড়েছে সেহারে মেধাবী শিক্ষার্থী বাড়েনি। আর 'জিপিএ ফাইভ' পাওয়া মানে উত্তম শিক্ষিত তাও নয়। সম্প্রতি দেশে অনেক 'জিপিএ ফাইভ' প্রাপ্তদেরকে যখন সাধারণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তারা আজব কিছু উত্তর দিয়ে দেয়। কারণও আছে। অমনযোগী শিখন ব্যবস্থা তার অন্যতম কারণ। দলবদ্ধ হয়ে পিকনিক খাওয়া, আলুভর্তা প্রস্তুত, দলীয়ভাবে দেখে লেখা, দিস্তা দিস্তা খাতা কালো করে জমা দেওয়া যখন পরিক্ষা ব্যবস্থা তখন তাকে গা ঢাকা শিক্ষা বললে ভুল কোথাই!
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় দিন দিন নৈতিকতা হারাচ্ছে জাতীর একটি প্রজন্ম। কারণ, শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন সব বটতলার বাজে উপন্যাসের সয়লাব ঘটেছে। আমাদের কচিকাঁচাদের শিক্ষার হাতে কড়িতেই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে অমূলক, অবান্তর কিছু পদ্য, গদ্য, ছড়া! এই যে,
"হাট্টিমা টিম টিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তারা হাট্টিমা টিম টিম
তাদের খাড়া দুটো শিং।"
এভাবে অবাস্তব, অবান্তর বুলি শিখানো হচ্ছে আমাদের নতুন প্রজন্মকে। এভাবে প্রতিটি শ্রেণিতে এমন কিছু পাঠ্য সংযোজন হয়েছে যা পড়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম কিছুই শিখতে পারবেনা। আমরা কতো আগডুম বাগডুম শিখিয়ে দিচ্ছি তাদের, যা তাদের মেধা বিকাশের অন্তরায়। বড় হলে তাদের গেলানো এ শিক্ষার অর্থ তারা যখন বুঝে পাবেনা তখনই তারা বলবে কতোখানি ধোঁকা তাদের দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকের একটি ক্লাসে বাংলা পড়াতে গিয়ে বাংলা বইয়ে একটা কবিতা দেখলাম যা পড়াতে গিয়ে নিজেও বিব্রত হলাম! কবিতার নাম, "আবোল তাবোল।" সব পড়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করে দেখলাম সবই ত আবোল তাবোল। বলুন, এতে করে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? এখানে নৈতিকতার সমন্বয় কই হলো? শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্য সংযোজনে আমাদের আরো সংবেদনশীল হওয়া, দায়ীত্বজ্ঞান থাকা খুবই দরকার বলে আমি মনে করি। অন্যতায় আমাদের এই শিক্ষা কোনভাবেই নৈতিকতার সমন্বয় ঘটাতে পারবেনা। নৈতিকতার সমন্বয় না থাকা শিক্ষিত গাদা গাদা সার্টিফিকেট ধারীকে আমি শিক্ষিত বলতে পারি না। এভাবে কতো আবোল তাবোল পড়তে পড়তে যে কোন সময় জাতীও আবোত তাবোল হয়ে পড়বে!
-লেখক
শিব্বির আহমদ রানা
কলাম লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: shibbirahmed90@gmail.com
প্রকাশক ও সম্পাদক : শিব্বির আহমদ রানা, ফোন নম্বর: ০১৮১৩৯২২৪২৮, 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐛𝐚𝐧𝐬𝐡𝐤𝐡𝐚𝐥𝐢𝐬𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐩@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
অস্থায়ী ঠিকানা: স্মরণিকা প্রিন্টিং প্রেস। উপজেলা সদর, জলদী, বাঁশখালী, পৌরসভা, চট্টগ্রাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত